খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকারকে ‘সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব’ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার দাবিতে এ পদযাত্রার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।
ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে বন্দি করা হয়েছিলো ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে। এখনো তিনি বন্দি অবস্থায় আছেন। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তার কিছু হলে সরকারকে সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব নিতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসেই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন। তিনি সারাদেশে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা তথা চারণ কবির মতো দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের পক্ষে জাগ্রত করে চলছেন। তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। ডাক্তারদের কথায় সরকার কান দিচ্ছে না, খালেদা জিয়া বের হলে তাদের মসনদ ঠিক থাকবে না তাই উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না।’
ফখরুল অভিযোগ করেন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সে মামলা দেয়া হয়েছে একই ধরনের মামলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে হয়েছিলো। কিন্তু তাদের মামলা তুলে নেয়া হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এরা অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকার। তারা ১৫ বছর ধরে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে। এরা এখন গণতন্ত্রের জন্য নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। দেখেন, আমাদের ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক জিসানসহ ছয় নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছয় ঘণ্টার মধ্যে তাদের মুক্তি না হলে দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ইস্পাত কঠিন মনোবল ধরে রেখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আমরা আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি। তাকে অবিলম্বে বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিতে হবে। চিকিৎসকরা তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মানেই হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হবে।’
আব্বাস বলেন, ‘সরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে গত দুটি নির্বাচন করছে। আওয়ামী লীগ এখন বাংলাদেশকে তছনছ করতে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে কঠোর প্রতিরোধে সরকারকে সরানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশি প্রভুদের দয়ায় সরকারের শেষ রক্ষা হবে না, জনগণ জেগেছে, সরকারকে বিদায় করা হবে।’
তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। নেতাকর্মীরা বাসায় থাকতে পারেন না। এ অনাচার-দুরাচার থেকে মুক্ত হতে হলে শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় করা ছাড়া উপায় নেই। বিদেশি প্রভুদের দয়ায় কোনো কাজ হবে না। দেশের মানুষ রাজপথে নেমেছে। তারা হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, আমরা মামলা হামলাবাজ সরকারের বিদায়ের লক্ষ্যে এখানে পদযাত্রা করছি। এদের বিদায় নিতে হবে। তারা আমাদের হামলা মামলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চায়। এভাবে কিছুদিন হয়তো টিকে থাকা যায়, তবে চিরদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আজ হোক কাল হোক, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এ সরকারকে বিদায় করবো।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা হবে না। ক’দিন আগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজা নিয়ে কী করলো? খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। তিনি কোনো অন্যায় করেননি। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে করতে এতদূর এসেছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাই, এ সংসদের বিলুপ্তি চাই।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বিচারিক আইন উপেক্ষা করে সাংবিধানিক আইন উপেক্ষা করে জেলে পাঠানো হয়েছে। শুধু মানুষের ভোটাধিকার লুটে নিয়ে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এটা করা হয়েছে। আজ খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তাদের বিচার হবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে কোনো আপোষ নেই। তাকে বাইরে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না। আমরা তার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবি করছি। বাংলাদেশে অন্যায় অবিচার বন্ধ করতে হবে। এটা চিরদিন চলতে পারে না।’
বিকেল ৩টার আগেই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে কাকরাইল মোড় ও শান্তিনগর মোড় হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। একই দাবিতে দেশের সব মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পদযাত্রা করছে বিএনপি।